বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:আর মাত্র কয়েকদিন। তার পরই বাংলার বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন তথাগত রায়। রবিবার তা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন। আর তা নিয়ে বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বাংলায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবেই তিনি রাজনীতিতে ফিরতে চাইছেন।
বাংলার রাজনীতিতে তথাগত রায় এবং সৌগত রায় বেশ পরিচিত দুই নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁরা দুই ভাই। পেশাগত দিক থেকে দু’জনই এক সময় অধ্যাপনা করেছেন। দু’জনেরই শিক্ষা, দীক্ষা এবং রাজনৈতিক জ্ঞান নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দু’জন ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। সৌগত রায় যেমন কংগ্রেসি রাজনীতিতে আস্থাশীল, তেমনই তথাগত রায় গৈরিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সৌগত রায় আগে কংগ্রেসে ছিলেন, পরে তৃণমূলে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি লোকসভায় তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অন্যদিকে, তথাগত রায় মেঘালয়ের বিদায়ী রাজ্যপাল। ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা ৪ বছর তিনি বাংলায় রাজ্য সভাপতি হিসেবে বিজেপির দায়িত্ব সামলেছেন। এর পর বিজেপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন প্রায় ৯ বছর।
২০২১ সালে পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখেই কয়েকদিন আগে তথাগত রায় বাংলার সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। শুধু প্রকাশ করাই নয়, বিষয়টি নিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। শনিবার রাতে শিলং থেকেই ট্যুইট করে তিনি লেখেন, ‘আজ দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং শিবপ্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছি। বিজেপিতে আমার ফের যোগ দেওয়া নিয়ে তঁাদের সঙ্গে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে দেখা হবে। তঁারা সবাই আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু কলকাতার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাকে সতর্কও করে দিয়েছেন এবং নিজের প্রতি যত্ন নিতে বলেছেন। আমি কৃতজ্ঞ।’
এর পর বাংলার রাজনীতিতে ফিরে আসার কথা রবিবার তিনি নিজেই জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে ফিরে আসার ইচ্ছে আমার নতুন নয়। আমি সবসময় সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতে চাই। আমি কখনও রাজ্যপাল হতে চাইনি। সেই ইচ্ছের কথা আমি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’ আর রাজ্য রাজনীতিতে ফের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল তাকে যে ভূমিকা দেবে, তা তিনি মেনে নেবেন। তবে এ কথা তিনি প্রকাশ্যে বললেও বাংলার রাজনীতিতে পালাবদল ঘটলে যে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে অনাগ্রহী নন, সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দল যদি আমাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করে, তা হলে আমি দলের নির্দেশ অবশ্যই পালন করব।’
আর এখানেই তৈরি হয়েছে হাজার এক সংশয়। রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। এ ছাড়া কখনও কখনও ওই পদে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসছে। এ ছাড়া বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন দাশগুপ্ত এবং অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও মাঝে মাঝে ভেসে উঠছে। এমতাবস্থায় তথাগত রায় সেখানে নতুন সংযোজন। তিনি নিজে দলের নির্দেশ মেনে নেবেন বললেও মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে নিজের নামটি নিজেই নিয়ে এসেছেন। এর পরই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রাজ্য বিজেপিতে প্রভাবশালী দিলীপ ঘোষ অনুগামীরা বিষয়টি কতখানি মেনে নেবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বুঝতে পারছেন, তথাগতকে নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল হতে পারে। তাই জল মাপতে তাঁরা ভিন্ন পথ অনুসরণ করছেন। রবিবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমাদের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আমরা কাউকে তুলে ধরব না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই আমরা নির্বাচন লড়াই করে জিতব। একবার জয়ী হয়ে যাওয়ার পরেই পরিষদীয় দল ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আলোচনার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা ঠিক করবে।’ এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে তথাগত রায়ের ইচ্ছে বা গোপন চেষ্টা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি আবার সরগম হবে বলেই অনেকের ধারণা।